ইন্টারনেট মার্কেটিং কি ? কেন এটা নিয়ে সবাই বলাবলি করছে আর ইন্টারনেটের ভাষাই বা কি ?
এটা কি মার্কেটিং বা বাজারজাতকরণ ?
আমি আপনাদের সহজভাষায় ইন্টারনেট মার্কেটিং বুঝতে সাহায্য করতে চাই। আমার বিশ্বাস আপনি এই লেখাটি পড়ে ইন্টারনেট মার্কেটিং কি এবং এটা কিভাবে টাকা উপার্জনে কাজে লাগাবেন সেটা বুঝে যাবেন।
বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার আগে এবং ইন্টারনেট মার্কেটিং শেখার আগে আমাদের জানতে হবে
মার্কেটিং কি?
মার্কেটিং/বাজারজাতকরণ হচ্ছে পণ্য-সেবা গ্রাহক পর্যন্ত পৌছানোর জন্য যেসব কার্যাবলী সম্পাদন করা দরকার সেগুলো করা। এর চেয়ে সহজ আর কোন সংজ্ঞা নেই।
যেসব কার্যাবলী করা দরকার সেগুলো নিম্নরুপ –
- উৎপাদন (Manufacturing)
- ব্র্যান্ডিং (Branding)
- মোড়কীকরণ (Packaging)
- বিজ্ঞাপন (Advertisement)
- অর্থ সংগ্রহ (Funding)
- বিক্রয় (Selling)
তাহলে এক কথায় বলা যায় একজন মার্কেটারকে পণ্য বিক্রি করতে যা যাকরতে হয় তাই মার্কেটিং
এখন আমি আপনাকে ইন্টারনেট মার্কেটিং-এর উপর ছোটখাটো একটা ধারণা দিব। ইন্টারনেট মার্কেটিং-এর কাজ ঠিক একই কাজ যেগুলো মার্কেটিং এ করা হয়। কিন্তু এটা করা হয় ইন্টারনেট-এ, ইন্টারনেটের জন্যে এবং ইন্টারনেট থেকে। ইন্টারনেট একটা মাধ্যম ছাড়া আর কিছুই না ঠিক যেমন- খবরের কাগজ, রেডিও ও টেলিভিশন। কিন্তু ইন্টারনেটের এতটা শক্তিসম্পন্ন ও বহুমূখী হয়ে উঠার পিছনে কারণ হচ্ছে যে এর আওতা বিশ্বব্যাপী।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে একজন নাইজেরিয়ার নাগরিক নাইজেরিয়াতে বসে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা করতে পারবে।
ইন্টারনেটে একটা ওয়েবসাইট সেটআপ করলে সেটা অনলাইন এ সারা বিশ্ব থেকে অর্ডার নিতে পারবে আর এটা চালু থাকবে দিনে ২৪ ঘন্টা/সপ্তাহে ৭ দিন/বছরের ৩৬৫ দিন।
সহজভাষায় ইন্টারনেট মার্কেটিং-এর মূল কাজ হচ্ছে কিছু না কিছু বিপনন বাবিক্রয় করা
কিন্তু ইন্টারনেট মার্কেটিং শুধু বিপনন ও বিক্রয়েই সীমাবদ্ধ থাকে না এতে আরও আছে,
- একটা জনগোষ্ঠী(Community) তৈরী করা
- বাজার গবেষণা করা
- বাজারে কর্তৃত্ব স্থাপন করা
- ব্যাবসার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করা
ইন্টারনেট মার্কেটিং-এর অসংখ্যা শাখা-প্রশাখা রয়েছে, যেমন-
ওয়েবসাইট মার্কেটিং
একটা ওয়েবসাইট সেটআপ করা মার্কেটিং-এর একটা অস্ত্র। ইন্টারনেটে ওয়েবসাইট তৈরী করা হয় তথ্য, যোগাযোগ ও পন্যের প্রচারের জন্য। ই-কমার্স সাইটগুলো নিজেই ক্রেতাদের থেকে অর্ডার নিয়ে থাকে এবং বিভিন্ন ডিজিটাল পন্য যেমন ই-বুক কিংবা অনলাইন কোর্স স্বয়ইক্রিয়ভাবেই ক্রেতাদের নিকট প্রদান করে।
উদাহরনঃ ডোমেইন এর ওয়েবসাইটে আপনি একটি .com ডোমেইন কিনতে পারবেন; টাকা দেবার সাথে সাথে আপনার ডোমেইন কার্যকর হয়ে যাবে –এখানে কোন মানুষের কাজটি পরিচালনা করার দরকার নেই। ২৪ ঘন্টা লেনদেন হচ্ছে।
সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট যেমন-ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস, লিংকড্ইন এইসব সাইটে মানুষ তাদের সিংহভাগ সময় ব্যয় করে থাকে। এসব সাইটে প্রায় প্রতিটি বিষয়ের উপর আগ্রহী জনগোষ্ঠী বা কমিউনিটি রয়েছে। সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করা হয় মুলত নতুন নতুন ক্রেতা পাওয়ার জন্যে এবং মার্কেটিং এর প্রসার ঘটানোর জন্যে।
সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং
বর্তমানে মানুষ বিভিন্ন তথ্য জানার জন্যে নানান সার্চ ইঞ্জিন (যেমন-গুগল, ইয়াহু, বিং ইত্যাদি) গুলোকে ব্যবহার করছে। হয়তো আপনিও Google এ সার্চ করে আমার ব্লগে এসে পড়েছেন। আপনার ওয়েবসাইটটিকে ভালোভাবে তদারকি বা অপ্টিমাইজ করলে, এসব সার্চের শীর্ষে চলে আসবে আপনার ওয়েবসাইট আর মানুষ যখন বিভিন্ন বিষয়ে সার্চ করবে তবে তখন সেটা আপনার জন্যে লাভজনক হবে। এই ধরনের মার্কেটিং-কে বলা হয় সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন।
ইমেইল মার্কেটিং
ইন্টারনেট জগতে সবারই ইমেইল/ওয়েবমেইল আইডি রয়েছে। প্রায় সব ওয়েবসাইটেই মেম্বার হওয়ার জন্য কিংবা একাউন্ট খোলার জন্য ইমেইল আইডি প্রয়োজন। ইন্টারনেটের শুরু থেকে ইমেইলই হচ্ছে এক নম্বর যোগাযোগ মাধ্যম। ইন্টারনেট মার্কেটাররা বিভিন্ন উৎসের মাধ্যমে এসব ইমেইল আইডিগুলো সংগ্রহ করে। এরপর তারা এসব ইমেইল এ তাদের পন্যের ব্যপারে তথ্য, নিউজলেটার পাঠায় যার প্রধান উদ্দেশ্য থাকে পন্য বিক্রয় এবং গ্রাহকের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন। একেই বলে ইমেইল মার্কেটিং।
ব্যানার মার্কেটিং
ইন্টারনেটে অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ভিজিট করে। একজন ইন্টারনেট মার্কেটার সেসব সাইটগুলোতে নিজের একটা ব্যানার বিজ্ঞাপন ভাড়া নিবেন। এ ধরনের মার্কেটিং প্রচলিত ব্যানার বিজ্ঞাপনের মতই। একজন ইন্টারনেট মার্কেটার এখানে প্রতি লেনদেন এ টাকা দিবেন অথবা প্রতিটি ক্লিকে টাকা দিবেন অথবা প্রতিটি “ভিউ” এর জন্যেও টাকা দিবেন। যেটা সচরাচর সাধারন ব্যানার এড এ সম্ভব না।
মোবাইল মার্কেটিং
দিন দিন মানুষ আরো বেশি ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের জগতে প্রবেশ করছে। মোবাইল ব্যবহারকারীরা মোবাইলে বিভিন্ন সাইটে ঢুকছেন। মোবাইল-এর জন্য ওয়েবসাইট বানানো, মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্য এপ্লিকেশন বানানো এবং মোবাইলের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য করা এসবই মোবাইল মার্কেটিং-এর আওতাভুক্ত। এছাড়াও গতানুগতিক এসএমএস মার্কেটিং এবং ইমেইল মার্কেটিং-ও মোবাইল মার্কেটিং-এ প্রচলিত রয়েছে।
ব্লগ মার্কেটিং
সাংবাদিকতার এক নতুন পন্থা হচ্ছে ব্লগিং। মানুষ এখন ব্লগের মাধ্যমে তাদের মনের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারছে। এসব অনুভূতিগুলো মানুষের উপর প্রভাব ফেলে এবং অন্যরাও বিভিন্ন মতামত দিতে সক্ষম হয়।
একজন ইন্টারনেট মার্কেটার তার নিজের একটা ব্লগ লিখবেন এবং তার নিজের বিশ্বস্ত পাঠককুল গড়ে তুলতে পারবেন।
অনলাইন প্রেস রিলিজ(সংবাদ বিজ্ঞপ্তি) মার্কেটিং
প্রেস রিলিজ কিংবা সংবাদ বিজ্ঞপ্তির সাইটগুলো অনলাইনের বার্তা সংস্থা। ইন্টারনেট মার্কেটারগণ তাদের পন্য সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ নিবন্ধ লিখে তা এসব সাইটগুলোতে পোস্ট করতে পারেন। যদি সেটি যথাযোগ্য হয় তবে সেটি বড় কোন সংবাদ মাধ্যম এবং খবরের কাগজে বা ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হবে।
ফোরাম এবং ডিস্কাশান মার্কেটিং
অনলাইনে প্রায় সকল বিষয়ের জন্যেই ফোরাম রয়েছে। একজন ইন্টারনেট মার্কেটার তার বার্তা ছড়াতে এসব ফোরাম-এর সাহায্য নিতে পারেন। প্রতিটি ফোরামের নানা ধরনের সদস্যগণ ও নিয়মনীতি থাকে। তাই সেই মার্কেটারকে বুঝে শুনে সেসব ফোরাম গুলো বাছাই করতে হবে।
আপনি উপরের যেকোনো বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে গুগল এ সার্চ দিতে পারেন। লেখাটি আপনার প্রিয় সোস্যাল নেটওয়ার্কগুলো তে শেয়ার করুন, যেমন- ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস ইত্যাদি। এটি আমাদের এক ধরনের ইন্টারনেট মার্কেটিং।
No comments:
Post a Comment